ইলম ও জিহাদ: দুটি অবিচ্ছেদ্য জমজ!
শরীয়তের দুটি দিক। দার্শনিক ও প্রায়োগিক। সহীহ ইলম শরীয়তের দর্শনকে সংরক্ষণ করে, আর সহীহ জি’হা’দ শরীয়তের প্রয়োগকে নিশ্চিত করে। দ্বীন প্রতিষ্ঠায় ইলম ও জি’হা’দ এমন দুটি জমজ, যা কখনো বিচ্ছিন্ন হতে পারে না। বিচ্ছিন্ন হলে দুটিই কার্যক্ষমতা হারায় এবং বিপথগামী হয়। একারণেই আল্লাহ তায়ালা রাসূল প্রেরণের সঙ্গে যেমন কিতাব নাযিল করেছেন, তেমনি জি’হা’দ ও কি’তা’লের জন্য ‘হাদীদ’ (লোহা)ও নাযিল করেছেন।
.
{لَقَدْ أَرْسَلْنَا رُسُلَنَا بِالْبَيِّنَاتِ وَأَنْزَلْنَا مَعَهُمُ الْكِتَابَ وَالْمِيزَانَ لِيَقُومَ النَّاسُ بِالْقِسْطِ وَأَنْزَلْنَا الْحَدِيدَ فِيهِ بَأْسٌ شَدِيدٌ وَمَنَافِعُ لِلنَّاسِ وَلِيَعْلَمَ اللَّهُ مَنْ يَنْصُرُهُ وَرُسُلَهُ بِالْغَيْبِ إِنَّ اللَّهَ قَوِيٌّ عَزِيزٌ } [الحديد: 25]
“নিশ্চয় আমি আমার রাসূলদেরকে স্পষ্ট প্রমাণাদিসহ পাঠিয়েছি এবং তাদের সাথে কিতাব ও (ন্যায়ের) মানদণ্ড নাযিল করেছি, যাতে মানুষ সুবিচার প্রতিষ্ঠা করে। আমি আরো নাযিল করেছি লোহা, তাতে প্রচণ্ড শক্তি ও মানুষের জন্য বহু কল্যাণ রয়েছে। আর যাতে আল্লাহ জেনে নিতে পারেন, কে না দেখেও তাঁকে ও তাঁর রাসূলদেরকে সাহায্য করে। অবশ্যই আল্লাহ মহাশক্তিধর, মহাপরাক্রমশালী।” –সূরা হাদীদ: ২৫
.
শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. (৭২৮ হি.) বলেন,
وأما العلم بالكتاب والحكمة ..... فالجهاد سنام الدين وفرعه وتمامه، وهذا أصله وأساسه وعموده. -مجموع الفتاوى: 15/ 390
“.... জি’হা’দ হলো দ্বীনের চূড়া ও পূর্ণতা, আর ইলম হলো দ্বীনের ভিত্তি ও স্তম্ভ।” -মাজমুউল ফাতাওয়া: ১৫/৩৯০
.
আল্লামা ইবনে আবেদীন শামি রহ. বলেন,
فإن قيام الدين بالجهاد والعلم -الدر المختار وحاشية ابن عابدين (رد المحتار) (6/ 403)
“শরীয়াহ প্রতিষ্ঠা লাভ করে জি’হা’দ ও ইলমের মাধ্যমে।”
দুঃখজনক সত্য হলো, আজ আমরা দুটিকে আলাদা করে ফেলেছি। অনেককে তো দুটিকে বিপরীতমুখী ও সংঘর্ষিকরূপে দাঁড় করাতেও দেখা যায়!
21 সেপ্টেম্বর
করেছেন
আব্দুল্লাহ আলমাহদি
জুমআর সময় যে নাজায়েয কাজটি অনেকেই করি!
অধিকাংশ মসজিদেই জুমআর সময় একটি নাজায়েয কাজ হয় এবং আমরা সকলেই তা করি, ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায়। অথচ মুহতারাম খতীব সাহেবগণ সামান্য দৃষ্টি দিলেই হাজার হাজার মানুষ নাজায়েয কাজটি থেকে বাঁচতে পারেন অনায়াসে।
আমরা জানি, খুতবা চলাকালে অন্য সকল কাজ নাজায়েয। সব কাজ বন্ধ করে খুতবা শ্রবণে মনোযোগী হওয়া ওয়াজিব। অথচ অনেক মসজিদেই দেখা যায়, খুতবা শুরুর প্রাক্কালে মসজিদের দানবাক্সগুলো চালু করা হয়, যা চলতে থাকে খুতবা শুরুরও বেশ কিছুক্ষণ পর্যন্ত। খতীব সাহেব ইচ্ছা করলে, দানবাক্স কাতারের শেষ মাথায় পৌঁছা পর্যন্ত দুই চার মিনিট অপেক্ষা করে খুতবা শুরু করতে পারেন। এতে কয়েক মিনিট সময় গেলেও হাজারো মানুষ একটি নাজায়েয কাজ থেকে বাঁচতে পারেন।
আমরা সকলেই নিজ নিজ অবস্থান থেকে বিষয়টির প্রতি খতীব সাহেবদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারি
13 সেপ্টেম্বর
করেছেন
আব্দুল্লাহ আলমাহদি
হক্কানী আলেম ও সত্যের পথিক মুমিনের গুরুত্বপূর্ণ একটি নিদর্শন
.
আমাদের অনেকের ধারণা, যিনি নিজে ভালো হবেন, তাকে সবাই ভালো বলবে এবং তিনি সবার প্রিয় হবেন। একইভাবে আমরা মুমিন, কাফির, মুরতাদ ফাসিক, ফাজির নির্বিশেষে সকলের কাছে সমাদৃত হওয়াকে অনেক সময় বড় ব্যক্তির বুজুর্গ হওয়ার প্রমাণ বা নিদর্শন হিসেবে পেশ করি। শোনা যায় তিনি এত বড় বুজুর্গ যার কোনো শত্রু নেই। যাকে সবাই সমীহ করে। কিন্তু বস্তুত এটি গোমরাহির নিদর্শন।
.
হক্কানী, বুজুর্গ ও সত্যবাদীর নিদর্শন হল, তাকে পৃথিবীর খারাপ মানুষগুলো খারাপ বলবে এবং বেশি কষ্ট দিবে।
.
একারণেই আমরা দেখি আমাদের প্রিয় রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেখানে পৃথিবীর সর্বকালে সর্বশ্রেষ্ঠ মানব, অথচ তাঁকেই এই পৃথিবীর বুকে সর্বাধিক কষ্ট দেয়া হয়েছে। খোদ রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
ما أوذي أحد مثل ما أوذيت في الله. كنز العمال، طبع مؤسسة الرسالة، ج:3، ص: 247
“আল্লাহর পথে আমাকে যত কষ্ট দেয়া হয়েছে, দ্বিতীয় কাউকে এত কষ্ট দেয়া হয়নি।” -কানযুল উম্মাল, খ. ৩, পৃ. ২৪৭
.
সাআদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস রা. থেকে একটি বর্ণনায় এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
أشد الناس بلاء الأنبياء ثم العلماء ثم الأمثل فالأمثل. المستدرك للحاكم، برقم: 5463
“সর্বাধিক কঠিন বালা মসিবতের শিকার আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম। তারপর উলামাযে কেরাম, তারপর যে তাঁদের আদর্শের যত নিকটে সে।” -মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস নং ৫৪৬৩
.
এ কারনেই সুফিয়ান ছাওরী রহ. (মৃত্যু: ১৬১ হি.) বলেন-
إِذَا أَثْنَى عَلَى الرَّجُلِ جِيْرَانُهُ أَجْمَعُوْنَ، فَهُوَ رَجُلُ سُوءٍ، لأَنَّهُ رُبَّمَا رَآهُم يَعصُوْنَ، فَلاَ يُنْكِرُ، وَيَلقَاهُم بِبِشْرٍ. -سير أعلام النبلاء، ج: 7، ص: 278، طبع مؤسسة الرسالة الثالثة: 1405هـ.
“যখন কারো প্রতিবেশীরা সকলেই তার প্রশংসা করে, বুঝতে হবে লোকটি ভালো নয়। কারণ তার মানে দাঁড়ায় সে তাদেরকে অনেক সময় অন্যায় করতে দেখেও তাতে বাধা দেয়নি, বরং তার সঙ্গে হাসি খুশি আচরণ করেছে।”
তিনি আরো বলেন-
إِذَا رَأَيتَ الرَّجُلَ مُحَبَّباً إِلَى جِيْرَانِهِ، فَاعْلَمْ أَنَّهُ مُدَاهِنٌ. -سير أعلام النبلاء، ج: 7، ص: 278، طبع مؤسسة الرسالة الثالثة: 1405هـ.
“যখন তুমি কাউকে দেখবে সে তার প্রতিবেশীদের সকলে প্রিয় পাত্র, বুঝে নিবে- সে শরীয়তের বিষয়ে অবহেলা ও শিথিলতা প্রদর্শনকারী।” -সিয়ারু আ’লামিন নুবালা, খ. ৭, পৃ. ২৭৮
17 অগাস্ট
করেছেন
আব্দুল্লাহ আলমাহদি
হক্কানি ও ন্যায়পরায়ণ আলেমের একটি বৈশিষ্ট্য ও দায়িত্ব
.
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
يحمل هذا العلم من كل خلف عدوله ينفون عنه تحريف الغالين، وانتحال المبطلين، وتأويل الجاهلين. مجمع الزوائد برقم: 601
“এই ইলম (ইলমে দ্বীন) বহন করবে প্রত্যেক উত্তরসূরীর ন্যায়পরাণরা। তারা এই ইলম থেকে সীমালঙ্ঘনকারীদের বিকৃতি, বাতিলপন্থীদের মিথ্যাচার এবং অজ্ঞদের অপব্যাখ্যা অপসারণ করবে"। (মাজমাউয যাওয়াইদ, হাদীস নং ৬০১)
.
'সীমা লঙ্ঘনকারীদের বিকৃতি' মানে, কোরআন সুন্নাহর ব্যাখ্যায় এমন বিষয় যুক্ত করা, যা উক্ত আয়াত ও হাদীস দ্বারা আল্লাহ ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উদ্দেশ্য নয়। অথবা কোরআন সুন্নাহর ব্যাখ্যা থেকে এমন কোনো অংশ বিযুক্ত করা, যা বস্তুত আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উদ্দেশ্য।
.
'বাতিলপন্থীদের মিথ্যাচার' মানে, অন্যায়ভাবে শরীয়ত সম্পর্কে মিথ্যা বলা। যেমন যে কথা আল্লাহ ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেননি, সে কথা সম্পর্কে বলা যে, এটা আল্লাহ বলেছেন বা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন।
.
'অজ্ঞদের অপব্যাখ্যা' মানে, যারা না জেনে কোরআন সুন্নাহর ভুল ব্যাখ্যা করে।
.
উপরোক্ত বিষয়গুলো যে আলেমরা ধরিয়ে দিবেন এবং উম্মতকে সে বিষয়ে সতর্ক করবেন, তারাই প্রকৃত ন্যায়পরায়ণ ও হক্কানি আলেম। পক্ষান্তরে যারা উম্মতের মাঝে এমন অন্যায় কর্মগুলো দেখেও কিছু বলবেন না, ভুলগুলো ধরিয়ে দিবেন না, উম্মতকে সতর্ক করবেন না, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দৃষ্টিতে তারা হক্কানি ও ন্যায়পরায়ণ আলেমদের উক্ত বৈশিষ্ট্য থেকে বঞ্চিত
15 অগাস্ট
করেছেন
আব্দুল্লাহ আলমাহদি